গ্যাজেটের জাদু আর আমাদের জীবন
আমার এক চাচাতো ভাই আছে, নাম রফিক। রফিকের বয়স তেইশ-চব্বিশ হবে। ছেলেটা দিনে ফোন ধরে প্রায় তেরো-চৌদ্দ ঘণ্টা। একদিন তাকে বললাম,
— রফিক, তোর প্রেমিকা আছে?
— কেন?
— ফোনটা তোকে এত ভালোবাসে, তোর আর কারও দরকার আছে নাকি?
রফিক হেসে বলল,
— মামা, ফোন ছাড়া একটা দিনও চলবে না। অফিসের কাজ, সিনেমা দেখা, খেলা দেখা, রাত জেগে চ্যাটিং— সব তো এই এক জিনিসে হয়।
আমি মাথা নাড়লাম। আমরাও তো একসময় ভাবতাম, চিঠি ছাড়া প্রেম হয় না। এখন দেখি, ইমোজি দিয়েও প্রেম হয়ে যায়!
গ্যাজেটের আগ্রাসন
আমাদের সময় ফোন মানে ছিল বাড়ির এক কোনায় রাখা একটা তার-ওয়ালা সেট। এখন? ছোট থেকে বড়— সবার হাতে স্মার্টফোন। শিশুরা ইউটিউবে গানের ভিডিও দেখে ভাত খায়, তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সকাল-বিকাল প্রেম করে, আর বুড়োরা ফেসবুকে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে।
কিন্তু, গ্যাজেটের এত ব্যবহার কি আমাদের ভালো করছে? নাকি গোপনে কেড়ে নিচ্ছে জীবনের আনন্দ?
গ্যাজেট বনাম সম্পর্ক
আগে বন্ধুদের সাথে দেখা হতো চায়ের দোকানে, এখন হয় ভিডিও কলে। আগে গল্প হতো মুখোমুখি বসে, এখন হয় টেক্সটে। আগে বই পড়া ছিল বিনোদন, এখন স্ক্রল করা।
আমার এক বন্ধু আছে, নাসির। ওর স্ত্রী প্রায়ই অভিযোগ করে—
— নাসির ভাই, আমি বলছি, আর উনি স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকেন। আমি রাগ করলে বলেন, “আর একটু, শেষ হয়ে যাচ্ছে!”
বুঝলাম, মানুষ না, আসলে মোবাইলের স্ক্রিনই তার আসল ভালোবাসা।
গ্যাজেটের সুফল? না কুফল?
সব দোষ দিয়ে দিলেই হবে না। গ্যাজেট আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে—
✔ জরুরি তথ্য হাতের মুঠোয়
✔ অনলাইনে কেনাকাটা, টাকা লেনদেন
✔ দূরের মানুষকে কাছে নিয়ে আসা
কিন্তু…
❌ চোখের ক্ষতি
❌ মানসিক চাপ
❌ সত্যিকারের সম্পর্কের দূরত্ব
এই যেমন রফিক, ফোন ছাড়া এক ঘণ্টা থাকলেই নাকি তার মনের অস্থিরতা বাড়ে!
উপসংহার
গ্যাজেট আমাদের বন্ধু, তবে শত্রুও হতে পারে— নির্ভর করছে আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি তার ওপর। ফোন রেখে একদিন প্রকৃতির সাথে কাটিয়ে দেখুন, সত্যিকারের গল্প করুন, হাসুন— দেখবেন, জীবনটা এখনো সুন্দর।
আমার কথায় বিশ্বাস না হলে, একদিন চেষ্টা করেই দেখুন!
আপনাদের কী মনে হয়? গ্যাজেট আমাদের জীবন সহজ করছে নাকি কঠিন? কমেন্টে জানান!